শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, (এনএসনিউজওয়্যার) — রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি শহিদ বুদ্ধিজীবীদের যাঁরা ১৯৭১ সালে বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহিদ হয়েছিলেন।
বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের সৃজনশীল, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা জাতির অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণিজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতিকে মেধাহীন করাই ছিলো তাদের হীন উদ্দেশ্য। বুদ্ধিজীবীদের এভাবে বর্বরোচিত হত্যাকা-ের মাধ্যমে জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তাঁদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আমাদের সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করুক- এ প্রত্যাশা করি।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এক কলঙ্কময় দিন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশুন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
আমি শহিদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। তাঁদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামায়াত ও ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো। তারা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে। পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি তারা হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ করে। বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ দেশের সেরা সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমার শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুনির চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, শহীদুল্লাহ কায়সার, গিয়াসউদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, আবদুল আলীম চৌধুরী, সিরাজউদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা প্রমুখ। তারা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। তাদের সেই প্রতিশোধ স্পৃহা আজও থেমে নেই।
মুক্তিযুদ্ধের এই পরাজিত শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। মুক্তমনা শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালায়। দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়। খুন, হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায়। এই সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব চালায়। তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায়। এতে জনগণের নাভিশ্বাস ওঠে।
আমরা দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছি। রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে। রায় বাস্তবায়নও হবে। কোনো ষড়যন্ত্রই জাতিকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে তাদেরও একদিন বিচার হবে। এসব রায় বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।
আমি দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতচক্রের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
তথ্যবিবরণী নম্বর : ৩৯৭৯