যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে ১০ই জানুয়ারি পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্মসূচি
ঢাকা, জানুয়ারি ৯ , (এনএসনিউজওয়্যার) — ১০ই জানুয়ারি, ১৯৭২ সাল। বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য ঐতিহাসিক দিন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি হানাদার সামরিক জান্তা শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর কাপুরুষোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে; ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র সংগ্রামে।
স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের দখলদার সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে তদানীন্তন পশ্চিম
পাকিস্তানের কারাগারে আটক রাখে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা সম্পর্কে তিনি পূর্বাহ্ণেই ধারণা করতে পেরেছিলেন। যার কারণে তিনি অন্য সকল নেতাকর্মীদেরকে আত্মগোপনে গিয়ে, দেশ ত্যাগ করে হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নিজে এর কোন পথ গ্রহন করেননি। কেননা, সেটা তাঁর মতো হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের পক্ষে বেমানান ছিল। যিনি একটি দেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা তারপক্ষে আত্মগোপন করা তাঁর কাছে শ্রেয় মনে হয়নি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু বহুবার বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান সরকারের কাছে তিনিই বড় শত্র“, তাকে না পেলে তারা আরো ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠতো।” সেটা তিনি ঘটতে দিতে চাননি। বরং তিনি সর্বোচ্চ ঝুঁকি নেয়ার পথকেই বেছে নিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের কারাগারে গোপন বিচারের মাধ্যমে তাঁর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল এবং কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠের সম্মুখেই তাঁর জন্য কবর পর্যন্ত খোড়া হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন দৃঢ় অবিচল। এই অবিচলতার মূলে ছিল বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর নিগূঢ় ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। মুক্তিকামী বাঙালির সকল আবেগ উচ্ছ্বাসকে নিজের হৃদয়পটে ঠাঁই দিয়ে তিনি ছিলেন এক আপোষহীন লক্ষে স্থির মুক্তির দিশারী। বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর সীমাহীন আস্থা এবং তাঁর প্রতি মানুষের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা বঙ্গবন্ধুকে সর্বদাই রেখেছে দৃঢ়চিত্ত, উন্নতশির, অসীম সাহসী ও জনবৎসল।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে লন্ডনে পৌঁছে সাংবাদিকদের কাছে বিবৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে বিচারের নামে এক প্রহসন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শুনানি অর্ধেক সমাপ্ত হবার পর পাক কর্তৃপক্ষ আমার পক্ষ সমর্থনের জন্যে একজন আইনজীবী নিয়োগ করে। আমি কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে দেশদ্রোহীর কলঙ্ক নিয়ে মৃত্যুদণ্ডের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর, আমার বিচারের জন্যে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল তার রায় কখনো প্রকাশ করা হবে না। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিচারের নামে প্রহসন অনুষ্ঠান করে আমাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর ফন্দি এঁটেছিলেন।’
‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের মতো এত উচ্চমূল্য, এত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় জীবন ও দুর্ভোগ আর কোন মানুষকে ভোগ করতে হয় নাই। বাংলাদেশে নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দায়ী। হিটলার যদি আজ বেঁচে থাকতো, বাংলাদেশের হত্যাকাণ্ডে সেও লজ্জা পেত।’
‘আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে রাজি নই। আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে নয়াদিলি¬র পালাম বিমান বন্দরে পৌঁছে ভারতের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী ভিভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাতের পর ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায় অভিযাত্রা। অবশেষে আমি ৯ মাস পর আমার স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলায় ফিরে যাচ্ছি। এ ৯ মাসে আমার দেশের মানুষ শতাব্দীর পথ পাড়ি দিয়েছে। আমাকে যখন আমার মানুষদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তারা কেঁদেছিল; আমাকে যখন বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তখন তারা যুদ্ধ করেছিল আর আজ যখন আমি তাদের কাছে ফিরে যাচ্ছি, তখন তারা বিজয়ী। আমি ফিরে যাচ্ছি তাদের নিযুত বিজয়ী হাসির রৌদ্রকরে। আমাদের বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন আমাদের সামনে তাতে যোগ দেয়ার জন্য আমি ফিরে যাচ্ছি আমার মানুষের কাছে।
আমি ফিরে যাচ্ছি আমার হৃদয়ে কারো জন্যে কোন বিদ্বেষ নিয়ে নয়, বরং এ পরিতৃপ্তি নিয়ে যে অবশেষে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের, অপ্রকৃতিস্থতার বিরুদ্ধে প্রকৃতিস্থতার, ভীরুতার বিরুদ্ধে সাহসীকতার, অবিচারের বিরুদ্ধে সুবিচারের এবং অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয় হয়েছে।”
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসে তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিতে গিয়ে আবেগ আপ¬ুত হয়ে বলেছিলেন,
‘‘যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, যারা বর্বর বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।
লক্ষ মানুষের প্রাণদানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের স্বাদ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার প্রতি জানাই সালাম। তোমারা আমার সালাম নাও।
আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ৩০ লক্ষ লোক মারা গেছে। আপনারাই জীবন দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে। খেয়ে পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা।
ইয়াহিয়া খান আমার ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন। আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে নতি স্বীকার করবো না। ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। তাদের আরো বলেছি তোমরা মারলে ক্ষতি নাই। কিন্তু আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও।”
৩০ লক্ষ মানুষের আত্মাহুতি, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র বীরত্বপূর্ণ মরণপণ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে সগৌরবে ঠাঁই করে নেয় বিজয়ী বাঙালি জাতি, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুৃ শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আজীবনের স্বপ্নসাধ প্রিয় মাতৃভূুমিতে ফিরে এসে শুরু করেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের দুরুহ কর্মযজ্ঞ। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ক্ষত মুছে বাংলাদেশকে উন্নয়ন অভিযাত্রায় সামিল করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তাদের এদেশীয় দোসরদের মিলিত ষড়যন্ত্রে সপরিবারে নিহত হন। অবৈধ ক্ষমতা দখলদার স্বৈরশাসকরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্জনসমূহকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। বাঙালি জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের মীমাংসিত প্রশ্নকে অমীমাংসিত করে তুলে। বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ নিষিদ্ধ হয়। সর্বগ্রাসী ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, জাতির জনকের অবদান এবং আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে মুছে দিতে চায়। গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকার হয় অপহৃত। দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা পরে মুখ থুবড়ে। কায়েম হয় এক অন্ধকারের রাজত্ব। কিন্তু দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ শত সংগ্রামে পরীক্ষিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই অবস্থাকে মেনে নেয়নি। জেল-জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে এবং অকাতর আত্মদানের মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়িয়েছে। দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করতে সক্ষম হয়েছে।
আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১০ জানুয়ারি এই ঐতিহাসিক দিবসকে আমাদের পালন করতে হবে নতুন আঙ্গিকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাঁর সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষে দিন বদলের প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ় পদবিক্ষেপে; ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব দূর করে উন্নত জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বিএনপি-জামাত অশুভ জোটের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করার জন্য
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিম্নরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে
১০ই জানুয়ারি ২০১৪ শুক্রবার
সকাল ৬.৩০ মিনিট : দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
সকাল ৭:০০ টায় : বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন।
বেলা ২টায় : জনসভা। স্থান : ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা এমপি।
উক্ত জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের মাননীয় উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি।
বক্তব্য রাখবেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি’র আহ্বান
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল¬ী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি বিবৃতিতে সংগঠনের সকল শাখাকে আগামীকাল ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জনসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সকল শ্রেণী-পেশা এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি