মেধা সম্পদের মালিকানা নিশ্চিত করা অপরিহার্য : টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী



ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বস্তুগত সম্পদের মালিকানার মতই মেধা সম্পদের মালিকানা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। মেধা সম্পদের মালিকানা সুরক্ষিত না হলে দেশে উদ্ভাবন কিংবা সৃষ্টিশীলতা বিকশিত হবে না। উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা হচ্ছে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের পূর্বশর্ত। মেধাসত্ত্ব সুরক্ষায় কপিরাইট, ট্রেডমার্ক এবং প‌্যাটেন্টের জন‌্য যুগোপযোগী ইন্টিলেকচ‌্যুয়াল প্রপার্টি রাইট (আইপিআর) আইনের পাশাপাশি ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারের মাধ‌্যমে আইপিআর চালু এবং মেধা সম্পদ আন্তর্জাতিকী করণে এই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার ওপর মন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় রবি‘র প্রধান কার্যালয়ে মোবাইল অপারেটর রবি ও টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল প্রযুক্তি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি‘র যৌথ উদ‌্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী কপিরাইট, ট্রেডমার্ক এবং প‌্যাটেন্ট বিষয়ে উদ্ভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ‌্যে ব‌্যাপক সচেতনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি এই বিষয়ে সংবাদ মাধ‌্যমসহ টিআরএনবিকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মন্ত্রী মেধাসত্ত্ব নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে বলেন কাগজ ভিত্তিক প্রকাশনার ওপর ভিত্তি করে কপি রাইটের সূচনা হয়। এখন সময় পাল্টেছে বুদ্ধিভিত্তিক মেধা সত্ত্বের পাশাপাশি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা রোবট দ্বারাও উদ্ভাবন হচ্ছে। উদ্ভাবনের এইসব বিষয়সমূহ মাথায় রেখেই মেধাসত্ত্বের বিষয়টি নিয়ে আইন প্রণয়ন করার বিকল্প নেই। মন্ত্রী ১৯৮৮ সালে তার উদ্ভাবিত বিজয় বাংলা সফটওয়‌্যারের মেধাসত্ত্ব নিবন্ধনে পাহাড়সম জটিলতা বর্ণনা করে বলেন, ‘ মেধা যে একটা সম্পদ সেটা বুঝাতেই পারিনি সংশ্লিষ্টদের। তার দীর্ঘ প্রচেষ্টার পথ বেয়ে আজ এই জটিলতার অবসান হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, উদ্বাবনের মালিকানা সত্ত্ব না পেলে উদ্ভাবক সৃষ্টি হবে না। বিশ্ব মেধা সম্পদ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইনটিল্চ‌্যেুয়েল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ওয়াইপো) তে বাংলাদেশের একমাত্র দৃষ্টান্ত উল্লেখিত বিজয় বাংলা সফটওয়‌্যারের উদ্ভাবক জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা কিংবা রোবটিক্সসের মাধ‌্যমে উদ্ভাবিত সৃষ্টিশীলতার মেধার মালিকানা কার থাকবে আইনে তাও স্পষ্ট হওয়া উচিৎ। মন্ত্রী ২০১৯ সালে ওয়াইপো মহাপরিচালকের সাথে তার বৈঠকের অভিজ্ঞতা বর্ণণা করে বলেন, রিসার্চ্ এন্ড ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে উদ্ভাবনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এ খাতে যথাযথ বিনিয়োগ অপরিহার্য উল্লেখ করে ওয়াইপো ডিজির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান ২০১৯ সালে চীনের একটি কোম্পানি এককভাবে সাড়ে পাঁচ হাজার প‌্যাটেন্ট নিবন্ধনের জন‌্য আবেদন করে অথচ সে বছর গোটা ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে এ আবেদনের সংখ‌্যা ছিল মাত্র তিন হাজারের কিছু বেশি। তিনি বলেন, চায়নার কোম্পানিটির সে বছর আরএন্ডডিতে বিনিয়োগ ছিল ১২ বিলিয়ন ডলার। প্রতিযোগিতা মূলক বিশ্বে উদ্ভাবন ছাড়া টিকে থাকার শক্তি নাই উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, মানুষ এবং যন্ত্রের সমন্বিত রূপ হচ্ছে পঞ্চম শিল্প বিপ্লব। এই জন‌্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শতশত বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্বের জায়গায় উপনীত হয়েছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এখন প্রস্তুত।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে রবি‘র সিইও রাজীব শেঠী, এমটবের সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অবসরপ্রাপ্ত), বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, টিআরএনবি সেক্রেটারি মো: মাসুদুজ্জামান রবিন, কপিরাইট কার্যালয়ের কর্মকর্তা নওরীন জাহান নিশা এবং ই-ক‌্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন শিপন বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব‌্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ।
বক্তারা মেধাসত্ত্ব সুরক্ষায় কপি রাইট, ট্রেডমার্ক এবং প‌্যাটেন্টের জন‌্য যুগোপযোগী ইন্টিলেকচ‌্যুয়াল প্রপার্টি রাইট (আইপিআর) আইনের পাশাপাশি ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা্র প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার উদ্ভাবকদের মধ‌্যে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীতয়তা তুলে ধরেন।

তথ‌্যবিবরণী

ঢাকা ২২ ডিসেম্বর: