বিএনপি প্রেস ব্রিফিং
ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর, (এনএসনিউজওয়্যার) — আপনারা জানেন যে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের উপর আজও গুলী চলেছে, আক্রান্ত হয়েছে তাদের বাড়ি-ঘর-প্রতিষ্ঠান, আহত ও গ্রেফতার হয়েছেন বহু নেতা-কর্মী।
ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন নেতা বলছেন, সমঝোতার লক্ষ্যে বিরোধী দলের সাথে আলোচনা চলছে। আর তথ্যমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এই নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ নেই। কোনটা সঠিক-এই প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য জনগণকে হয়তো সরকারের অন্য কোন নেতা কিম্বা মন্ত্রীর বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে। সরকারী জোট নিজেদের মধ্যে ১৫৪টি আসন ভাগাভাগি করে নেয়ায় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের ভোটের অধিকার হারিয়েছে। যে সংসদ গঠিত হতে যাচ্ছে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই জনগণের নির্ধারিত প্রতিনিধি নন- নেতা-নেত্রীদের মনোনীত। ফলে এই নির্বাচনী প্রহসন বন্ধ না করলে যে সংসদ গঠিত হবে তা নির্বাচিত সংসদ হবে না-হবে মনোনীত সংসদ। জনগণ এটা চায় না। জনগণ চায় তাদের ভোটে নির্বাচিত এবং তাদের কাছে দায়বদ্ধ প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ। সরকার জনগণকে এই ন্যয্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে। ফলে তারা ক্ষুব্ধ এবং প্রাপ্য আদায়ের, সংগ্রামে লিপ্ত।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আলোচনার মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছেন। কিন্তু সরকার যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার অশুভ প্রয়াসে নানা কৌশল একদিকে পাতানো নির্বাচনের নাটক চালিয়ে যাচ্ছে-অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলন দমনের জন্য খুন, গুম, হামলা, মামলার মত নৃশংসতা ও নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। রাষ্ট্রীয়, প্রতিষ্ঠান ও বাহিনী সমূহকে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না-চলতে দেয়া উচিত নয়। আর তাই ১৮ দলীয় জোট মনে করে যে, চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই। ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নাটক বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগই শুধু জনগণকে এই আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারবে।
কোন ধরনের কৌশলে বিভ্রান্ত করা কিম্বা শক্তি প্রয়োগ করে জনগণকে আন্দোলন থেকে পিছপা করা যাবেনা।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর খৃষ্টান ধর্মবিলম্বী জনগণের সবচেয়ে বড় ধর্মী উৎসবের দিন। এটা বিবেচনায় রেখে ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হচ্ছে যেÑ আগামী ২১ ডিসেম্বর শনিবার ভোর ৬টা থেকে ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সারাদেশে অবিরাম শান্তিপূর্ণ সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ চলবে।
২১ডিসেম্বর শনিবার জাতীয় টিকাদান কর্মসূচীর সাথে যুক্ত জাতিসংঘ ও স্বাস্থ্য বিভাগের যানবাহন এবং অবরোধ চলা কালে সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীবাহী গাড়ী এম্বুলেন্স, ফায়ার বিগ্রেড ও লাশবাহী গাড়ির চলচলে কোন বাধা থাবকে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর আহুত অবরোধ কর্মসূচী সফল করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑ বিরোধী দলকে ভোট দিয়ে হয়নি বলে জাতি অভিশাপ মুক্ত হোল। তাদের দলের কুৎসিত পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগের এবং মহাজোটের ১৫৪ জন প্রার্থীকে তথাকথিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে আনার নামে নিজেরাই অভিশপ্ত হয়েছেন বলে জনগণ বিশ্বাস করে। এই অভিশাপের কালিমা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই চিরদিন বহন করতে হবে।
তিনি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্য, বাড়ি-ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে যে উক্তি করেছেন তা উস্কানিমূলক এবং কোন সরকার প্রধানের মুখ থেকে এমন বক্তব্য শুধু বেমানান নয়-জাতির জন্য লজ্জা জনক। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের পরিবারের সদস্যদের এবং তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে সব হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং চলছে তার দায় এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপরই বস্তবে।
অবৈধ সরকারের নিষ্ঠুর জুলুম-নির্যাতনের পরেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহবানে চতুর্থ দফায় চলমান শান্তিপূর্ণ টানা ৭২ ঘন্টা অবরোধ কর্মসূচির আজ তৃতীয় দিন অতিবাহিত হচ্ছে। এই অবরোধ কর্মসূচি জনগণের স্বত:স্ফুর্ত সমর্থন ও সহযোগিতায় সাফল্যজনকভাবে পালিত হওয়ায় ১৮ দলীয় জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দেশবাসী এবং বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সর্বোপরি শত বাধা বিপত্তির মুখে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ভাই-বোনেরা যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন সেজন্য তাদেরকে এবং সংবাদ সংশ্লিষ্ট সকলকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।
রাজপথের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদের শোকাহত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আহতদের আশু সুস্থতা কামনা এবং গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি.