বিএনপি প্রেস ব্রিফিং
ঢাকা, ১৯ নভেম্বর, প্রেস বিজ্ঞপ্তি :নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে অন্ধকারে অদৃশ্য একটি রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট নামে ঐ ভূঁইফোড় সংগঠনটির কিঞ্চিৎ অস্তিত্বের খবরও দেশবাসী জানেনা। নিবন্ধিত ৪২তম দল হিসেবে নিবন্ধনের সনদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ‘বিএনএফ’ শব্দটি বিএনপি শব্দটির প্রায় সমধ্বণী সম্পন্ন। সুতরাং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্যই অত্যন্ত নোংরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনএফ কে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। পোড়ো বাড়ির ভগ্নস্তুপে লুকিয়ে থাকা নাম না জানা কোন এক অশরীরি প্রেত্মাত্বা বিএনএফ এর নামে তিনশো আসনে প্রার্থী দিবেন বলেছেন, এই প্রার্থীরা কি নির্বাচন কমিশনের মনোনীত ? নাকি প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত ? এটা আজ জাতি জানতে চায়।
‘বিএনএফ’ কে নিবন্ধন না দেয়ার জন্য গত ১১ জুলাই বিএনপি’র পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমরা অভিযোগ করেছিলাম-বিএনপিকে ভাঙ্গার লক্ষ্যেই সরকার তার সকল ইন্সট্রুমেন্ট যথা গোয়েন্দা সংস্থা, জনপ্রশাসনসহ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং এই কারনেই বিএনএফ কে দাঁড় করানো হয়েছে। কারণ, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি’র প্রতীক, ১৯ দফা এবং জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার করেছে বিএনএফ।
কিন্তু আমরা বিস্মিত হয়েছি, নির্বাচন কমিশন বিএনপি’র এই অভিযোগ গ্রাহ্য করেনি। বরং ‘বিএনএফ’ কে নিবন্ধিত করতে কমিশন তিন দফা সুযোগ দিয়েছে। অথচ অনেক দল যারা নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে নিবন্ধন দেয়া হয়নি। তাদের আবেদনগুলি নির্বাচন কমিশনে ধুলার স্তুপের মধ্যে পড়ে আছে।
যে শর্তগুলির ওপর ভিত্তি করে একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হয় সেটির কোন শর্তই পূরণ করতে পারেনি ‘বিএনএফ’। এমনকি কমিশন সারাদেশে তদন্ত করেও ‘বিএনএফ’ নিবন্ধন পাওয়ার মত কোন উপাদান খুঁজে পায়নি। কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনএফ- এর কার্যালয় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও সেইসব ঠিকানা ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা অনুসন্ধান চালালেও সেই সমস্ত কার্যালয়ের তারা কোন হদিস পাননি।
সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন-তিনি দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবেন। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীত্বও ত্যাগ করবেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি কি চমৎকার কৌশলে সেবাদাস নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার কর্মকান্ডে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অভিনয় দক্ষ প্রধানমন্ত্রীর নাটকপ্রিয়তায় আরো কত অভাবনীয় অভিনয় দৃশ্য জাতিকে দেখতে হবে সেটা এখন অপেক্ষার পালা।
নির্বাচন কমিশন তার কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক নিরপেক্ষতার ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে। সরকার এখন যে গণতন্ত্রবিধ্বংসী কার্যক্রম চালাচ্ছে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সেটির একজন দায়িত্ববান এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। সরকার একতরফা নির্বাচনের নামে এখন গণতন্ত্রকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়েছে। প্রতিদিন নানা ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে প্রকৃত বাকশালের দিকেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের মনতুষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশন সরকারের একতরফা নির্বাচন আয়োজনের কেয়ারটেকারের ভূমিকা পালন করছে। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন সংগঠন।
অথচ এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধিতে নিজেদের ক্ষমতা হ্রাস করে সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিলেন। যখন দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবদলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অধীর হয়ে আছে তখন নির্বাচন কমিশনের দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি বিরোধী যে সর্বনাশা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে তাতে কমিশনের অন্তরের ইচ্ছাটি বুঝতে আর কারো বাকি নেই। আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যে কি তাবেদারী ভূমিকা পালন করবে সেটি দেশবাসীর নিকট পরিস্কার।
আগামী সাধারণ নির্বাচন এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে হলে তারা সরকারের পক্ষে ফলাফল পৃ-এ্যারেঞ্জেড করে রাখার সম্ভাবনা আছে। এই নির্বাচন কমিশন মন্ত্রীদের পদত্যাগের পরও পদে থেকে যাওয়ার কারনে যে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে সেবিষয়ে টু শব্দটিও করেনি। আবার সেই মহাজোটের সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার তোড়তোজ চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি’র পক্ষ থেকে অনুরোধ করার পরও নির্বাচন কমিশন ‘বিএনএফ’ কে নিবন্ধনের সনদ দেয়ার যে লজ্জাজনক ঘটনাটি ঘটালেন জনগণের নিকট একদিন তার কৈফিয়ত দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণের নিকট সত্যের দরজা-জানালা বন্ধ হয়নি। অবৈধকে বৈধ করার জালিয়াতির সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য আপনাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে
নির্বাচন কমিশনের এহেন হীন উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে বিএনএফ কে নিবন্ধন সনদ প্রদানের বিরুদ্ধে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি অবিলম্বে বিএনএফ এর নিবন্ধন সনদ বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি। এই নির্বাচন কমিশন মোসাহিবির চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে। এই নির্বাচন কমিশন এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বর্ধিত অংশ। আমরা এই নির্বাচন কমিশনেরও পদত্যাগ দাবি করছি।
এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী
যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি।