বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিবৃতি

বিএনপি চেয়ারপার্সন, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর গুলশানস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচন বাতিলে বাধ্য করতে সারাদেশ থেকে সকল শ্রেণী-পেশার সক্ষম জনগণকে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকায় আসার জন্য ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’ ঘোষনা করেন। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষনার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রী পরিষদের কতিপয় সদস্য ও আওয়ামী নেতারা কর্মসূচিটিকে বন্ধ করার জন্য যেভাবে ধমকের সুরে কথা বলছেন তাতে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাম্ভিকতা, সীমাহীন আষ্ফালন, অগণতান্ত্রিক আচরণ জাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে যৌথবাহিনী দিয়ে রাজধানী সহ সারাদেশে বিরোধী দল নিধনে সাঁড়াশী অভিযানের নামে বিরোধী নেতা-কর্মী ছাড়াও তাদের পরিবার-পরিজনকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার অথচ সরকার ২৯ ডিসেম্বরের শান্তিপূণ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’ কর্মসূচি পালন করতে অনুমতি দিলো না। সরকারের এ ধরণের হিংসাশ্রয়ী আচরণে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, গণতন্ত্র নামক শব্দটিকে তারা ইতোমধ্যেই কবর দিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’ যেকোন উপায়ে বন্ধ করতে সরকারের একগুঁয়েমীতা এবং গণতন্ত্র হরণের নির্লজ্জ বহি:প্রকাশকে ন্যাক্কারজনক আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ এক বিবৃতিতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার যে হুমকি দিয়েছিলেন ঠিক একই কায়দায় আঙ্গুল উঁচিয়ে ঐ একই নেতা ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’ বন্ধ করতে গতকাল যেভাবে ধমক দিলেন তাতে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার স্বৈরাচারীত্বকেও হার মানিয়েছে। তার বডি ল্যাংগুয়েজে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, এ দেশ এবং দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কেনা সম্পত্তি। মির্জা আলমগীর বলেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাহায্যে ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখানো যত সহজ,

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সহ জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য ছাড়া রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা তার চেয়ে অনেক কঠিন। ২৯ ডিসেম্বরের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বানচালে সরকারী ঘোষনা ও বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে ১৮ দল জনগণকে সাথে নিয়ে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এটাই বাস্তবতা। তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসী’র মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিপরীতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখী দাঁড় করানোর প্রেক্ষিতে সম্ভাব্য সৃষ্ট অচলাবস্থার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন।

সারাদেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে যে নৃশংসতা চালানো হচ্ছে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা আলমগীর বলেন, “মনে হয় আমরা যেন এক মগের মুল্লুকে বাস করছি”। ক্ষমতালোভী বর্তমান সরকার ক্ষমতার সীমারেখা অতিক্রম করে প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সারাদেশে বিভিষিকাময় এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমাদানের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে সরকার বৈধ অস্ত্র জমাদান নিষিদ্ধ ঘোষনার মাধ্যমে গোটা জাতিকে এক ভীতিকর অবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। এ ধরণের ঘোষনা এটাই প্রমান করে যে, বিরোধী দল ও জনগণকে দমনে সরকার দলীয় বাহিনীর অস্ত্রের শক্তি বলবৎ রাখলো, এতে করে বোঝা যায় জনগণের শক্তির ওপর তাদের কোন আস্থা নেই। তিনি বলেন, “এ ধরণের ঘোষনার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।” গতরাতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার শামিম পারভেজ এর স্ত্রী ও দুই সন্তান, যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসানের বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই কন্যাকে গ্রেফতার এবং রাজশাহীতে দুস্কৃতকারি কর্তৃক পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলায় পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সহ চার শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, দেশে আইনের শাসন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকেই কেবল গ্রেফতার ও হয়রানী করা হচ্ছেনা বরং নেতা-কর্মীদের স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা ও ভাই বোনদেরকেও গ্রেফতারের পাশাপাশি নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরণের অমানবিকতা ১৯৭১ এর পাক হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর পৈশাচিকতাকেও হার মানিয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নি:শর্ত মুক্তি এবং রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। মির্জা আলমগীর নিহত পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ এর আত্মার শান্তি এবং আহত অন্য পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা ও আশু সুস্থতা কামনা করেন। এছাড়া তিনি নিহতের পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান।