বাংলাদেশের মানবাধিকার পরি¯ি’িত ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র-এর পর্যালোচনা

ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর, (এনএসনিউজওয়্যার) — ২০১৩ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনায় দেখা যায়Ñ মানবাধিকারের প্রধান দইু ভাগের মধ্যে একটিতে; অর্থাৎ অথর্ ৈনতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। এ বছরে ক্ষুধা সচূকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভালো অব¯া’নে রয়েছে বলে বিশের¦ খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে পভ্রাবশালী গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (ইফপ্রি) বিশের¦ ক্ষুধা সচূক প্িরতবেদনে পক্রাশ করে। ২০১৩ সালে এই সচূকে ১১ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। একই সময়ে বিশ্ব খাদ্য ও কৃিষ সংস্থা (এফএও) তাদের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক অব¯া’ নিয়ে যে প্িরতবেদন পক্রাশ করেছে তাতে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যুর হার ও দারিদ্র হ্্রাস পাওয়াসহ মানব উনয়œন সচূ কের অনেকগুলো অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করেছে। ’৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকা এ বছরের সবচেয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়। ২০১৩ সালে যদ্ধুাপরাধীদের বিচারে বিশেষ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। এ বছরে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মোট ৬টি রায় পদ্রান করে এবং উচ্চ আদালতে আপিলসহ বিচারের চড়ূান্ত পর্যায় শেষে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পম্রাণিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কাদের মোলাøর দ-াদেশ কার্যকর করা হয়। অন্যদিকে মানবাধিকারের আরেকটি সূচক; নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি না হলেও এ ক্ষেত্রেও কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যেÑ সরকার কতর্কৃ দেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ¯ী^কৃিত প্রদান, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের আলোকে শিশু আইন-২০১৩, প্িরতবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সরুক্ষা আইন-২০১৩, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩, নির্যাতন ও হেফাজতে মত্যৃু (নিবারণ) আইন-

২০১৩, বৈদেশিক কমর্সং¯া’ন ও অভিবাসী আইন-২০১৩, জাতীয় নদী রক্ষা আইন-২০১৩ প্রণয়ন উল্লেখযোগ্য।

এতদসত্বেও ২০১৩ সালে সাবির্ক মানবাধিকার পরি¯ি’িত ছিল চরম উদ্বেগজনক। বছরব্যাপী ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকা রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরি¯ি’িতর অবনতির কারণে সাধারণ মানুেষর মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃিষ্ট হয়। ’৭১ এর যদ্ধুাপরাধের বিচারের রায় ও জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সষ্টৃ রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিভিন্ন সহিংস কর্মকা- ও নাশকতার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে ব্যাপকহারে আগুন লাগানো ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে সাধারণ মানুে ষর প্রাণহানি এবং রেল, থানা, পুলিশফাঁড়ি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারি বিভিন্ন ¯া’পনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরসহ আইন-শক্সৃখলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ, বেধড়ক মারপিট, জখম ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। ১৮ দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের সময় জামায়াত-শিবিরের ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ, প্িরতপক্ষের লোকজনকে খনু-জখম, হাত-পায়ের রগ কাটা, অগিস্নংযোগ, ভাঙচরুসহ বিভিন্ন নাশকতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ-াদেশ ঘোষণায় জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থকদের তান্ডব ভয়ানক রূপ ধারণ করে। বিভিন্ন যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের কারণে এবং বোমা বানাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলসহ দেশের সাতটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯৭ জনের মধ্যে ২৫ জন মারা যান। অপরদিকে বিরোধীদলের বিভিন্ন রাজনৈতিক কমর্সূচি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কতর্কৃ নিবির্চারে গেফ্রতার, আটক ও গুলি বর্ষণসহ অতিমাত্রায় বল প্রয়োগের ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়। ২০১৩ সালে দেশের বিভিন্ন ¯া’নে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন; বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেওয়া, ভাঙচরু, লটুপাট এবং প্িরতমা ভাঙচুরের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এসব সহিংসতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বছরের বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের কর্মীরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর রোষানলে পড়েন এবং হত্যাসহ সাংবাদিক নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটে। মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশের বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর পক্রাশিত প্িরতবেদনে তথ্য বিকৃিতর অভিযোগে সংগঠনটির সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান শুভ্রকে গত ১০ আগস্ট ডিবি পুলিশ কতর্কৃ গেফ্রতার এবং পরে তাকে পাঁচ দিনের রিমা-ে নেওয়ার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এছাড়া বিগত বছরগুলির মতো এ বছরেও গুম, গুপ্তহত্যা, ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুে দ্ধর নামে বিচারবহিভর্তূ হত্যাকা- অব্যাহত ছিল। ২০১৩ সালে বিনা বিচারে আটক, পুলিশের নির্যাতন ও হেফাজতে মত্যৃুর ঘটনা ছিল বিশেষভাবে লক্ষনীয়। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরেও ঘটেছে নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা। এ বছরে মানবাধিকারকর্মী মাহমদুা খাতুন মায়ার অপহৃত হওয়ার ঘটনাটি ছিল মানবাধিকারকর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক একটি ঘটনা। ৬ ফেব্রুয়ারি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এই কর্মী দায়িতর¡ত অব¯া’য় দুষ্কৃতিকারী কতর্কৃ অপহরণের শিকার হন। আইন-শক্সৃখলা রক্ষাকারী সদস্যদের সহযোগিতায় মায়াকে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা পর

উদ্ধার করা স¤ব¢ হয়।

২০১৩ সালের সবচেয়ে বিপযর্য়কর ঘটনা হচ্ছে সাভারের ‘রানা পাøজা’ ভবন ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত এবং অসংখ্য শ্িরমক আহত ও চিরতরে পঙ্গু হওয়ার ঘটনা। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে দীঘর্দিন ধরে বিরাজমান বাংলাদেশের গামের্›টস শ্িরমকদের কমর্ক্ষেত্রে ঝঁিুকপূর্ণ পরিবেশ ও তাদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত-সমালোচিত হয়। তাছাড়া এ বছরে পিলখানা হত্যাকান্ডের রায়ে এক সাথে ১৫২ জনের মত্যৃুদ-াদেশ ঘোষণা স্মরণাতীতকালের নজিরবিহীন ঘটনা। অন্যদিকে বহুল আলোচিত বিশ¦িজৎ দাস হত্যা মামলার

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনা ২

রায়ে অভিযক্তু ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ৮ জনের মৃত্যুদ- এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- পদ্রান সšা¿সীদের বিরুদ্ধে দষ্টৃান্তমলূ ক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত এ বছরে ¯র^াষ্ট্র মন্ত্রণালয় র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো নিরপরাধ কিশোর লিমনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দায়ের করা দুিট মিথ্যা মামলা তুেল নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ২৭ আগষ্ট মাদারীপুর শহরের যৌনপলীøতে হামলা, ভাংচরু, লুটপাট এবং যৌনকর্মীদের মারধর ও লাঞ্ছিত করাসহ তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে উচ্ছেদ করার ঘটনা জীবন ও বাস¯া’নের অধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সমালোচিত হয়।

গুম-গুপ্তহত্যা রাষ্ট্রীয় সšা¿সের অপেক্ষাকৃত নতুন সংযোজন গুম বা গুপ্তহত্যা। অপহরণ, নিখোঁজ, গুম বা গুপ্তহত্যার প্রায় সব ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, আইনশক্সৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন জোরপূর্বক কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কয়েকদিন ধরে তিনি নিখোঁজ থাকেন এবং এর পর কোনো একদিন হঠাৎ করে কারও গলিত পচা লাশ উদ্ধার হয়। আবার দীঘর্দিন ধরে কোনো পক্রার খোঁজই মেলে না। অর্থাৎ নিখোঁজদের অনেকেই গুম হয়ে যাচ্ছেন অথবা গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ ঘটনায় অপহৃত, নিখোঁজ বা নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা আইনশক্সৃখলা রক্ষাকারী বাহিনী; বিশেষত র‌্যাব ও ডিবি’র বিরুদ্ধে এসব ঘটনার সাথে সংশিষ্টøতার অভিযোগ তুললেও সাধারণত এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে কোনো পেস্র নোট প্রদান বা কোনো পক্রার দায়-দায়িত্ব ¯ী^কারসহ গুম বা গুপ্তহত্যা রোধে কোনো আইনগত ব্যব¯া’ কিংবা তদন্ত কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোয় গুম বা গুপ্তহত্যা বিষয়ে পক্রাশিত খবরের পরিসংখ্যান অনযুায়ী ২০১৩ সালে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ৫৩ জন। এর মধ্যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৩ জনকে পুিলশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে মাত্র ২ জন মুিক্ত পেয়েছেন এবং বাকিদের এখন পযর্šÍ কোনো খোঁজ মেলেনি।

২৭ নভে¤র^ রাত আনমুানিক সাড়ে ১০টার দিকে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক এমপি সাইফলু ইসলাম হিরু, বিএনপির লাকসাম পৌরসভার সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ এবং বিএনপির আরেক নেতা জসিম উদ্দিনকে লাকসাম থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে কুিমলাøয় যাওয়ার পথে কালো পোশাকধারী একদল লোক তাদের অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়ে দিয়ে অন্য একটি গাড়িতে তাদের উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে অপহৃত তিনজনের মধ্যে জসিম উদ্দিনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব এবং তিনি বতর্মানে কারাগারে আছেন। তবে এখনও পযর্š Í সাবেক এমপি সাইফলু ইসলাম হিরু এবং বিএনপি নেতা হুমায়নু কবির পারভেজের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি।

১১ মে সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ নরু মসজিদের পেছনের গলি থেকে ডিস ব্যবসায়ী মোঃ ফকরুল ইসলামকে ৮/১০ জন র‌্যাব সদস্য (পোশাক পরিহিত) ‘র‌্যাব-৩’ লেখা একটি গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে ঘটনার পত্র্যক্ষদর্শী ও ফকরুলের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। এ ঘটনায় ফকরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব-৩ ও ১, রমনা থানা, ডিবি কার্যালয়সহ বিভিন্ন ¯া’নে আবেদন-নিবেদন করা হলেও অদ্যাবধি তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২৬ মে রাজধানীর গুলিস্তানের গোলাপশাহ মাজারের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর ৫৬ ন¤র^ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক রহুল আমিনকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুিলশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী লোকজন। পত্র্যক্ষদর্শীরা জানান, রহুল আমিন গোলাপশাহ মাজারের কাছে একটি দোকানে চা পান করছিলেন। সেসময় একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে ৪/৫ জন লোক আসে। তারা ডাক দিলে রহুল এগিয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে গাড়িতে তুেল নেয় সাদা পোশাকধারীরা। এর পর রুহুল আমিনের আর কোনো খোঁজ মেলে নি। অন্যদিকে ২৬ জনু থেকে নিখোঁজ রয়েছেন জগনাœথ বিশ¦িবদ্যালয়ের ব্যব¯া’পনা বিভাগের মাস্টাসের্র ছাত্র নুরুল আমিন। নিখোঁজের বড় ভাই আল আমিন জানান, ঐদিন রাত আনমুানিক ৮টার দিকে গুলশান থানার সামনে থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা তার ভাইকে আটক করে। ২৮ জলুাই পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিখোঁজ নরুুল আমিনের সন্ধান দাবি করলেও অদ্যাবধি তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু

বতর্মান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড বন্ধে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হলেও সরকারের শেষ বছরে এসেও আইনশক্সৃ খলা বাহিনীর ক্রসফায়ার, বন্দকুযদ্ধু, গুলিবিনিময় ও এনকাউন্টারের নামে রাষ্ট্রীয় মোড়কে হত্যাকান্ড এবং থানা-পুিলশসহ বিভিন্ন হেফাজতে নির্যাতন ও মত্যৃুর ঘটনা অব্যাহত ছিল। ২০১৩ সালে আইন-শক্সৃখলা বহিনী কতর্কৃ বিচারবহিভর্তূ হত্যাকান্ডের শিকার হন মোট ৭২ জন। এর মধ্যে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ২৪ জন, পুলিশের ক্রসফায়ারে ১৭ জন, বিজিবি’র ক্রসফায়ারে ১ জন, পুিলশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ২৬ জন এবং র‌্যাব ও পুিলশের যৌথ নির্যাতনে ১ জনের মত্যৃু হয়।

১ জলুাই রাজধানীর গুলিস্তানস্থ গোলাপশাহ মাজার এলাকায় গভীর রাতে ডিবির সাথে বন্ধকুযুেদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন ইয়াছিন নামের এক ক্ষদ্রু ব্যবসায়ী। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর ৬ জলুাই তিনি চিকিৎসাধীন অব¯া’য় মারা যান। ৩১ জুলাই রাত আনমুানিক সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরার কাওলা এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে যুবলীগ নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ ২ জন নিহত হন। একই তারিখে ভোররাতে নড়াইল শহরের হেলিপ্যাড-এলাকায় গভীর রাতে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন পারভেজ নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী। অন্যদিকে কুষ্টিয়ায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-১২) সদস্যরা ইকবাল হোসেন নামে এক ক্ষদ্রু ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে তার বড়ভাই হাফিজরু রহমান অভিযোগ করেন। অন্যদিকে জমি কেনা-বেচা কেনার মধ্য¯ত’াকারী শামীম সরদার এবং মোঃ সাইফলু ইসলামকে ৫ জুন হেমায়েতপরুস্থ মোলাø ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন একটি দোকানের সামনে থেকে সাভার থানার এ.এস.আই আকিদলু ইসলামসহ কয়েকজন পুিলশ সদস্য জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে তুেল নিয়ে যায়। পরে ওই গাড়িতে করে বিভিন্ন ¯া’নে ঘোরানোর পর শামীমকে হেমায়েতপরু ট্যানারী পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নিমর্মভাবে নির্যাতন করে। পরদিন শামীমের মতৃদেহ ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুিলশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদশর্ক মিজানরু রহমান এবং ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনা ৩

ফারুক হোসেনকে প্রধান করে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, পুলিশের দুই কমর্কর্তা ও তিন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে হত্যা, মারধর, চাঁদা দাবি ও চুরির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় এবং টাকা চেয়ে না পেয়েই পুিলশের ওই সদস্যরা শামীমকে পিটিয়ে হত্যা করে। ১ সেপ্টেম্বর বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিজ্রন সেলে চিকিৎসাধীন হাজতি জামসেদ হাওলাদার ওরফে জাসেমের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। নিহতের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, মহানগর গোয়েন্দা পুিলশের (ডিবি) এস.আই হেলালউদ্দিন গেফ্রতার করার পর তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ১৭ নভে¤র^ কুিষ্টয়ার দৌলতপরু থানা হেফাজতে জাফর নামে এক যবুকের মত্যৃু হয়। পুিলশ তার কাছে ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করে এবং টাকা না পেয়ে জাফরকে শারীরিক নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

২০১৩ সালে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরি¯ি’িত ছিল খবুই উদ্বেগজনক। এ বছরে যদ্ধুাপরাধের বিচারের রায় ও জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সষ্টৃ রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সহিংস কর্মকান্ড ও নাশকতার ঘটনা ঘটে। ১৮ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার হরতাল-অবরোধের সময় জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা; বিশেষত ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং ভাংচুর, অগিস্নংযোগসহ বিভিন্ন নাশকতামলূক কর্মকান্ড চরম আকার ধারণ করে। অপরদিকে বিরোধীদলের বিভিন্ন রাজনৈতিক কমর্সূিচ মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতর্কৃ নির্বিচারে গেফ্রতার, আটক গুলি বর্ষণসহ অতিমাত্রায় বল প্েরয়াগের ঘটনা ঘটে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দীঘর্দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হামলাসহ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুেক দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ১৪৫ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আইন-শক্সৃখলা বাহিনী কতর্কৃ বিরোধীদলের সভা-সমাবেশে বাধা দান, জামায়াত-শিবিরের ঝটিকা মিছিলে গুলি, গণগেফ্রতার ও আটকের ঘটনা রাজনৈতিক সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ২০১৩ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আইন-শক্সৃখলা বাহিনীর সংঘর্ষ, ক্ষমতাসীন দলের সাথে বিরোধীদল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ মোট প্রায় ৮৪৮টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব রাজনৈতিক সংঘাতে মোট ৫০৭ জন নিহত এবং প্রায় ২২,৪০৭ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে ১৫ জন পুিলশ সদস্য ও দইুজন বিজিবি সদস্য রয়েছেন।

২৯ ডিসে¤র^ ১৮-দলীয় জোটের ডাকা ‘গণতšের¿ অভিযাত্রা’ কমর্সূিচর সমথর্নে জাতীয় পেস্রকা¬বে সাংবাদিকদের একাংশের সমাবেশে এবং সুিপম্র কোর্ট প্রাঙ্গনে বিরোধীদল সমথির্ত আইনজীবীদের ওপর পুিলশের উপ¯ি’িততে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় হামলা করে। সরকার সমথির্ত বহিরাগত লোকজন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুেক নারী আইনজীবীসহ অন্যদেরকে বেধড়ক মারপিট করে এবং আইন-শক্সৃখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জলকামান ও সাউন্ড গে্েরনড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ¦িবদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশও এই

কমর্সূিচতে যোগ দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন।

২৫ নভে¤র^ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে এ পর্যন্ত ১৮-দলীয় জোটের ডাকে লাগাতার রাজপথ-রেলপথ-নৌপথ অবরোধ কমর্সূিচ চলাকালে দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে ২৬ নভে¤র^ থেকে ১৫ ডিসে¤র^ পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের সময় ৭৫ জন এবং ১০-১৩ ডিসে¤র^ যদ্ধুাপরাধের দায়ে জামায়াতের ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার দন্ডাদেশ কার্যকর করা নিয়ে সহিংসতা ও সংঘষের্র ঘটনায় ৩০ জন নিহত হয় ( প্রথম আলো, ১৬ ডিসেম্বর )। এ সময়কালে দেশের প্রায় ৫০টি জেলাতে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও সবচেয়ে বেশি সহিংস পরি¯ি’িত ছিল সাতক্ষীরায়। জামায়াত-শিবিরের ভয়াবহ তান্ডবে সারাদেশ থেকে এ জেলা কাযর্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গাছ কেটে ও রাস্তা খুড়ে মাইলের পর মাইল রাস্তা বন্ধ করে রাখাসহ বিভিন্ন সহিংস কর্মকান্ডের ফলে সাতক্ষীরাবাসী জামায়াত-শিবিরের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা খঁেুজ খঁেুজ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও হিন্দুদের বাড়িঘরসহ ব্যবসা প্িরতষ্ঠানে ব্যাপক হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১১ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-নির্যাতনসহ তাদের বাড়িঘর ভাঙচরু, অগিস্নংযোগ ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সহিংসতা মোকাবেলায় শেষ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। গত ১৫ ডিসে¤র^ এ অভিযান চলাকালে যৌথ বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নিহত হন।

২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক যদ্ধুাপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতাসহ আইন-শক্সৃখলা বাহিনীর সাথে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হন। এ দিন জামায়াত শিবিরের কর্মীরা চার পুলিশকে পিটিয়ে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাদ থেকে ফেলে একজন প্েরকৗশলীকে হত্যা করে এবং দেশের বিভিন¯œা’নে জামায়াত-শিবিরের সাথে আইন-শক্সৃখলা বাহিনীর সংঘর্ষে সাধারণ মানষু ১২ জন, জামায়াত-শিবিরের ১৪ জন, বিএনপির ২ জন এবং আওয়ামী লীগের ২ জন নিহত হন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রধান কার্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের ভয়ানক তান্ডবসহ ভাংচরু, লুটপাট ও অগিস্নংযোগ; গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনে আগুন ও পুিলশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা, বগুড়ায় পুলিশের অস্ত্র লটু এবং ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের ফিশপেটø খুেল ফেলায় মহানগর গোধূিল টেন্র লাইনচ্যুত হয়।

৩ মার্চ বগুড়া শহরতলীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ‘চাঁদে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুখ দেখা যাচ্ছে’ বলে ঘোষণা দিয়ে সাধারণ মানষুকে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানানো হয়। এ ঘোষণার পর থেকে জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থকরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বগুড়া শহর ও আশেপাশের উপজেলায় ভয়াবহ ধংসযজ্ঞ চালায়। দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর, লটুপাটসহ অগিস্নংযোগ করে থানা, পুিলশ ফাড়ি, রেল স্টেশন, উপজেলা পরিষদ, ব্যবসা প্িরতষ্ঠান, বাড়িঘর, প্িরতপক্ষীয় রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি, দলীয় কার্যালয় এবং মুিক্তযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়। এ দিনের সংঘর্ষে নিহত হন ১২ জন। এ ঘটনায় বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পযর্šÍ জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় নিহত হন ৮২ জন। এ সময়কালের মধ্যে ২৫টি উপজেলার ৩৫

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনা ৪

সরকারি দপ্তর ও ১০টি সরকারি গাড়িতে ভাংচুরসহ ও আগুন দেয়া হয় এবং মহাসড়কের পাশে প্রায় ৩০ হাজার বড় বড় গাছসহ বিভিন্ন স্থানের রাস্তা কাটা হয়।

৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকে ঢাকা অবরোধ এবং পরে মতিঝিলের শাপলা চত¡ের সমাবেশকে ঘিরে ওইদিন দপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আইন-শক্সৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতায় একজন পুিলশসহ মোট ২২ জন নিহত হয় বলে পত্র-পত্রিকা সূেত্র জানা যায় (প্রথম আলো, ৭ মে)। মতিঝিলের সমাবেশে অংশ নিতে আসার পথে হেফাজত কর্মীরা মতিঝিল, পল্টন ও ফলুবাড়িয়া এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কমীর্দের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় ব্যাপক তান্ডব চালায় হেফাজতের কর্মীরা। পরুানা পল্টন এলাকায় সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়, হাউজ বিল্ডিং ভবন, জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকের বুথ এবং মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাংচরু, অগিস্নংযোগ, ধংসযজ্ঞ চালানো হয়। কোরআন শরীফে আগুন দেয়াসহ পল্টন-গুলি¯া’নের ফটুপাতের দোকানগুলোতে আগুন লাগানোর ফলে ক্ষদ্রু ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যায়। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের অনিদির্ষ্টকালের জন্য সমাবেশস্থলে অবস্থান নেয়ার ঘোষণায় তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে গভীর রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি, পেপার ¯েপ্র, ও সাউন্ড গে্েরনড নিক্ষেপ করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন ৬ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের বিভিন্ন এলাকায় এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও বাগেরহাটে হেফাজত কর্মীদের সাথে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবির সংঘর্ষে ২৭ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দজুন পুিলশ, বিজিবির দজুন, সেনাবাহিনীর একজন এবং কয়েকজন হেফাজতের কর্মীসহ সাধারণ মানষু ও রয়েছেন। এ দিনের সংঘর্ষে হেফাজত কর্মীরা বিভিন্ন সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে এবং পুিলশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কে আগুন দেয়। ৬ মে হেফাজত কর্মীরা টে্েরন করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে রাত আনমুানিক সাড়ে ১০টার দিকে কুিমলাø রেল স্টেশনে ২০-২৫ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা ও চাপাতি নিয়ে ট্রেনে উঠে ট্রেন থেকে হেফাজতের কয়েকজন কর্মীকে নামিয়ে এলোপাথারি মারধর করে। এতে গুরুতর আহত দুজনকে কুিমলাø মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অব¯া’য় গত ৭ মে মতিউর রহমান নামে একজন হেফাজত কর্মী মারা যান (প্রথম আলো, ৮ মে)। উল্লেখ্য, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশসহ অন্যান্য কমর্সূিচতে বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসা ছাত্র ও শিশুদের মানব ঢাল ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার গত ৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে পিরোজপুেরর নিজবাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর জখম হওয়ার পর ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মোস্তফা হাওলাদারের ছেলে হাফিজুল দাবি করেছেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকজন তাঁর বাবার ওপর হামলা করেছেন। ১২ ডিসে¤র^ লক্ষীপরু জেলা শহরে র‌্যাবের সাথে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সংঘষের্র ঘটনায় নিহত ৫ জনের মধ্যে জেলা যবু দলের নেতা ইকবাল মাহমদু জুয়েলের লাশ গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, ওইদিন দুপরু আড়াইটার দিকে র‌্যাবের একটি হেলিকপ্টার পুিলশ লাইনে অবতরণ করে এবং ৩টা ৮ মিনিটে ঐ এলাকা ত্যাগ করে। এর আগে লক্ষীপরু-চৌমুহনী মহাসড়ক অংশে ১৮ দলের কমীর্রা র‌্যাবের চারটি গাড়ি ঘিরে ফেলে। র‌্যাবের সঙ্গে থাকা মাইক্রোবাসে জুয়েলের লাশ তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে বলে তার পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন।

এ বছরে অবরোধকারীদের অন্যতম টার্গেট ছিল ট্রেনে নাশকতা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের বগিতে আগুন, ফিসপেটø খুেল ফেলা ও লাইন উপড়ে ফেলাসহ ট্রেনে নাশকতার অনেক ঘটনা ঘটে। ৪ ডিসে¤র^ ১৮-দলীয় জোটের অবরোধে গাইবান্ধার বোনারপাড়ায় রেললাইনের ফিসপেটø খুেল ফেলার কারণে পদ্মরাগ একর্্েপস্র লাইন চ্যুত হয়ে ৪ জন যাত্রী প্রাণ হারান এবং অধর্শতাধিক যাত্রী আহত হন।

সংখ্যালঘু নির্যাতন

২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক যদ্ধুাপরাধীদের বিচার ও রায়কে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন ¯া’নে সংখ্যালঘু নির্যাতন; বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বাড়িঘর, দোকানপাটে আগুন দেওয়া এবং প্িরতমা ভাংচুরসহ লুটপাট, চাঁদাবাজি, শারীরিক নির্যাতনের অসংখ্য ঘটনা ঘটে। যার অধিকাংশ ঘটেছে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী ও জামায়াত-শিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মদদে। অন্যদিকে সংখ্যালঘু স¤পদ্রায়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট দায়িতশ¡ীল পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় নি। বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুেদর ওপর আক্রমণের আশঙ্কার বিষয়ে আগে থেকেই আঁচ করা গেলেও আইন-শক্সৃখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ আগাম সর্তকতা হিসেবে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে হামলাকারীরা নিবির্ঘেœ এতো সহিংস ঘটনা ঘটাতে পেরেছে।

এ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৭৮টি বাড়িঘরে ভাংচরু ও অগিস্নংযোগ, ২০৮টি ব্যবসা প্িরতষ্ঠানে অগিস্নংযোগ ও ভাংচরু এবং মন্দির-উপাসনালয়

ও প্িরতমা ভাংচুেরর ৪৯৫টি ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সংখ্যালঘু আহমদিয়া মসুলিম জামায়াতের ওপরও হামলা-নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটে।

২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কতর্কৃ জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণার পর ঐ দিন বিকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা সদরের জলদী বাজারে ব্যাপক হামলা চালিয়ে উপজেলা কার্যালয়, উপজেলা আদালতসহ বিভিন্ন প্িরতষ্ঠানে ব্যাপক হামলা, লুটপাট চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। হামলাকারীরা জলদী বাজারের হিন্দুেদর প্রায় ৫০টি দোকানপাট ভাংচুর ও লটুপাট করে এবং অন্তত ১০টি ব্যবসা প্িরতষ্ঠান আগুন দিয়ে পুিড়য়ে ফেলে। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি চালালে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কয়েকশ হামলাকারী বাজারের নিকটবর্তী মহাজনপাড়ার শীলবাড়ির ৬টি পরিবারের তিনটি টিনের ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং এক ব্যক্তিকে কুিপয়ে হত্যা করে। এসব হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অদ্বৈতানন্দ মন্দিরের পক্ষ থেকে ১টি সহ মোট ৯টি মামলা হয় এবং উপজেলা চেয়ারম্যানসহ মোট ৩০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনা ৫

সাঈদীর রায়ের পর জয়পরুহাট জেলার সদর থানা এলাকার মাধাইনগর বাজারে জামায়াতে ইসলামের কয়েকশ লোক মিছিলসহ বাজারে ঢুে ক প্রায় ৩০টি দোকান ভাংচরু করে এবং দোকানের ক্যাশবাক্সের টাকা-পয়সাসহ সব মালপত্র লটু করে নিয়ে যায়। একই দিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানাধীন রাজগঞ্জ বাজারেও স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীরা বাড়িঘর ভাংচরু, লুটপাট করে এবং ১৩টি বাড়িসহ তিনটি মন্দিরে আগুন দেয়। হামলা প্রতিহত করতে আসা পুিলশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষে ঘটনা¯’েল একজন নিহত ও একজন মারাত্মকভাবে জখম হয়। এ ঘটনার পরে হামলাকারীরা আরও একটি হিন্দু পাড়ার প্রায় ১১টি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। রাতে তারা দরূবর্তী কালিরহাট বাজারের কালীমন্দিরে হামলা করে মন্দিরের দেয়াল গুড়িয়ে দিয়ে মন্দিরে আগনু দেয়। এ ঘটনায় প্রায় পঞ্চাশের অধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপরু থানাধীন ফলদা গ্রামে ১২০ বছরের প্রাচীন ফলদা কেন্দ্রীয় সাবর্জনীন শ্রী শ্রী কালীমন্দিরে গত ১ এপিল্র রাতে আগুন দেওয়া হয়। এতে মন্দিরঘরসহ এর ভেতরের ছোট বড় ২৫টি প্িরতমা পুড়ে যায়। পরে স্থানীয় যুবলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে এ ঘটনার সাথে সম্পক্তৃতার অভিযোগ করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। ¯া’নীয় সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামন ওই মন্দির দেখতে গেলে তার সঙ্গী ছিল সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি। এ ব্যাপারে প্িরতবাদ করায় এমপি সাহেবের লোকজন তার সমানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ধমক দেয়। ২৭ অক্টোবর ১৮-দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের সফিনগর বাজারে হরতাল সমর্থকরা হামলা করে। হামলাকারীরা বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৬টি দোকান এবং একটি মুসলিম স¤পদ্রায়ের দোকানে হামলা করে। দোকানগুলোর মালামাল লটু করা হয় এবং দোকানের আসবাবপত্র বাইরে বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় পাটগ্রাম থানাকে অবহিত করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় নি এবং পুিলশ ঘটনা¯’েল হামলার ১দিন পরে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২ নভেম্বর পাবনা জেলার আতাইকোলা থানাধীন বনগ্রাম এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত বনগ্রাম পবূর্ পাড়া (সাহাপাড়া), কামারগাড়ী রোডস্থ ঘোষপাড়া ও গার্লস স্কলু রোডের হিন্দুপাড়াগুলোর বাড়িঘর ও মন্দিরে এবং বনগ্রাম বাজার এলাকায় হিন্দু স¤পদ্রায়ের লোকজনের কিছু দোকানে হামলা, ভাংচুর ও লটুপাট সংঘটিত হয়। এতে প্রায় ৩৪টি পরিবারের শতাধিক ঘর এবং ৫টি মন্দির ক্ষতিগস্ত হয়। ক্ষতিগ¯্রÍরা সকলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূিমকা নিয়ে পশ্রœ তুেলছেন। এ ঘটনায় ¯া’নীয় বিএনপি-জামায়াত এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সমথর্কদের একাংশের সংম্পক্তৃতার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোলাøর দ-াদেশ কাযর্কর হওয়ার পর থেকে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা, আশাশুনি, কালীগঞ্জ, কলারোয়া ও তালা উপজেলায় হিন্দু স¤পদ্রায়ের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্িরতষ্ঠানগুলোতে ভাঙচরু, লটুপাট ও অগ্নিসংযোগ করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। গত ১২ থেকে ১৫ ডিসে¤^েরর মধ্যে ওই অঞ্চলে এমন আক্রমণের শিকার হয়েছে হিন্দুেদর ৩৬টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্িরতষ্ঠান।

৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের শতবর্ষ পূির্ত উপলক্ষে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার স্কাউট প্িরশক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী বাষির্ক সম্মেলন অনুষ্ঠানে হামলা করে মৌলবাদী গোষ্ঠী। পুিলশের উপ¯ি’িততেই তারা অনষ্ঠু ান প্যান্ডেলে অগিস্নংযোগসহ বর্বর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।

এছাড়া গাইবান্ধা, চাপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, ময়মনসিংহ, গাজীপরু , মুন্সীগঞ্জসহ ৩০টিরও বেশি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেওয়া, ভাংচুর, লুটপাট এবং মন্দিরে অগিস্ন ংযোগসহ প্িরতমা ভাংচুেরর ঘটনা ঘটে।

সাংবাদিক নির্যাতন

২০১৩ সালের রাজনৈতিক সহিংসতার অন্যতম শিকার হন গণমাধ্যমের কর্মীরা। বিভিন্ন সময় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সরকার ও বিরোধীদলের রোষানলে পড়েন এবং হত্যা, নির্যাতন ও গেফ্রতারসহ বিভিন্ন হয়রানীর শিকার হন। গত বছরের বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ¯র^াষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বারবার প্িরতশু্রতি দেয়ার পরও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ নিয়ে সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের ওপর পক্রাশিত খবরের পরিসংখ্যান অনযুায়ী এ বছরে ৩ জন সাংবাদিক নিহত হন এবং অন্তত ২৮০ জন সংবাদকর্মী বিভিনভœাবে বিভিনজœনের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ৪৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা, ৫৬ জন সšা¿সী দ্বারা, ১৪১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের দ্বারা এবং হেফাজত ইসলাম কতর্কৃ ২৪ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন। ৫ মে রাজধানীর পল্টনে পুিলশ ও হেফাজতে ইসলামের মধ্যে সংঘর্ েষর সময় পুিলশের গুলিতে আহত সাংবাদিক ফারহান পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ২১ নভে¤র^ রাত সাড়ে আটটার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া বাজারে কুপিয়ে হত্যা করেন দৈনিক জন্মভূিমর দেবহাটা উপজেলা প্িরতনিধি আবু রায়হানকে। ২০১৩ সালে সবচেয়ে আলোচিত হয় ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম কতর্কৃ ইটিভির রিপোর্টার সাদিয়া শারমীনের ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা। হেফাজতে ইসলামের ৫ মে এর সমাবেশেও ইলেকট্রনিক, পি›্রট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রায় ১৪ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান হেফাজতের কর্মীরা। গত ২০ জুলাই শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দইু সংবাদকর্মী ইমতিয়াজ মোমিন ও মহসীন মকুলুকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে পটয়ুাখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। ২৮ মার্চ যশোরের অভয়নগর উপজেলার প্রথম আলো প্রতিনিধি মাসুদ আলমের ওপর ৯/১০ জন সšা¿সী হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলাসহ তাকে মারাত্মকভাবে জখম করে। ২৭ জলুাই ময়মনসিংহের নান্দাইলে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার নান্দাইল উপজেলা প্িরতনিধি মোঃ শাহ আলম ভইূয়ার ওপর হামলা চালিয়ে হাত ভেঙ্গে দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ এবং রাষ্ট্েরদ্রাহের অভিযোগে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত ১১ এপিল্র তাঁর পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে আদালতের মাধ্যমে ১৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনা ৬

ওঠে। ওইদিন আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশ্য, বিভিন্ন সময়ে ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় পক্রাশিত নানা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্েরণাদিত সংবাদ সমাজে বিশক্সৃখলা ও নৈরাজ্যকর পরি¯ি’িতর সৃিষ্ট করাসহ সংঘর্ষ ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডকে উস্কে দিয়েছে বলে

অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নাস্তিকতা বিষয়ক তথ্য প্রচার করে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে তোলা।

নারী নির্যাতন

বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরেও নারী উত্যক্তকরণ, সালিশের নামে ফতোয়া, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন ও গহৃ কর্মী নির্যাতনসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটে। দেশের নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অব্যাহত আন্দোলনের কারণে নারী নির্যাতনের

অনেক ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা হলেও মূলত বিচার প্রক্রিয়ার দীঘর্সত্রূতার ফলে ঘটনার সংখ্যা ও ভয়াবহতা কমছে না।

ধর্ষণ-গণধর্ষণ

২০১৩-এর শুরুর দিকে ধর্ষণ ও গণধষর্ণের ঘটনা ও এর ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয় এবং এ বিষয়ে দেশব্যাপী নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবাদসহ বিভিন্ন আন্দোলন-কমর্সূিচ অব্যাহত থাকে। ২০১৩ সালে মোট ৮১২ জন নারী ধর্ষণ ও গণধষর্ণের শিকার হন। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী সময়ে ৮৭ জনকে হত্যা করা হয় এবং আত্মহত্যা করেন ১৪ জন। ৫ জানুয়ারি রাজধানীর শাহ আলীর ঝিলপাড় বস্তির চাদনীকে ধর্ষণসহ নির্যাতনের পর হত্যা করে দবুর্ত্তৃরা। এ ঘটনায় শিশু চাঁদনীর লাশ নিয়ে ¯া’নীয় লোকজন ক্ষব্ধু হয়ে মিছিলসহ সড়ক অবরোধ করে। ১৯ জানয়ুারি নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর রাজধানীর তোপখানা রোডের ট্িরপক্যাল টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবনের শৌচাগার থেকে ১০ বছরের শিশু রিতু আক্তারের রক্তাক্ত ও অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, রিতুেক ধষর্ণের পর হত্যা করা হয়েছে। ২৪ জানয়ুারি বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মানিকগঞ্জে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানরা এলাকায় গামের্›টস কর্মী এক যুবতীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে ওই বাসের চালক দিপু মিয়া ও হেলপার আবলু কাশেম। এছাড়া মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী বান্ধবীর সাথে ঢাকার সাভারে বেড়াতে এসে ধষর্ণের শিকার হন। ধর্ষণকারীরা ধষর্ণের চিত্র ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে বাজারে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনার তরুণীর মা থানায় মামলা করলে পুলিশ অভিযক্তু ৪ জনকে গেফ্র তার করে। ২০ ফেব্রুয়ারি সাভারের কমলাপুর এলাকায় ওয়াহিদা নামে এক তরুণীকে গণধর্ষণের পর পাশবিক নির্যাতনসহ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে গাছের সঙ্গে লাশ ঝুিলয়ে রাখা হয়।

৭ ডিসে¤র^ অবরোধের মধ্যরাতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় বাবা ও ছেলেকে এক ঘরে আটকে রেখে মা ও মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়। রাত ১২ টার দিকে ৮-১০ জনের একটি দল ওই বাড়ির মধ্যে ঢুেক সবাইকে ঘমু থেকে তুেল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাবা ও ছেলের সামনে মা

ও মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণকারীরা বাড়ির স্বর্ণালংকার, মুেঠাফোন সেটসহ মুল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।

উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানী ও নির্যাতন বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালেও শিক্ষা প্িরতষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মস্থলে যৌন নিপীড়ন ও বখাটেদের দ্বারা নারী উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা ঘটেছে। এ বছরে সবচেয়ে আলোচিত হয় কুষ্টিয়ার স্কলু শিক্ষক হেলাল উদ্দিন ও তার সহযোগিদের দ্বারা এলাকার স্কুল ছাত্রীসহ কয়েকজন নারীর সাথে ফসুলিয়ে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের মেলামেশার দশ্যৃগুলি ভিডিও ধারণ করে পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা। গত জনু থেকে জুলাই মাসের মধ্যে সংঘটিত এসব ঘটনার ভিডিও দশ্যৃগুলি ভক্তুভোগীদের পরিবার এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় ‘সামাজিক বিপর্যয়’ দেখা দেয়। এ ঘটনায় আসকসহ স্থানীয় বিভিন্ন নারী সংগঠনগুলোর প্িরতবাদ ও আন্দোলন কমর্সূিচর কারণে অভিযক্তুরা গেফ্রতার হয়। কিন্ত কয়েকদিন পরেই মূল অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন ছাড়া পায় এবং তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ফলে এ ক্ষেত্রে আশানরুƒপ কোনো অগ্রগতি অজর্ন স¤ব¢ হয়নি।

ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নে এক সংখ্যালঘু গৃহবধূর ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন চলছে দেড় বছর ধরে। অভিযক্তু জসিম মোলাø এলাকায় খুব প্রভাবশালী ও ¯া’নীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারেস মোলাøর ছেলে হওয়ায় গহৃ বধরু ¯া^মী ও প্িরতবেশীদের কেউ প্িরতবাদ করার সাহস পান না। গত ১৩ সেপ্টেম্বর গৃহবধূর স্বামী খুব সকালে কাজে চলে গেলে ছুির দিয়ে খিড়কি খুলে ওই গহৃবধরু ঘরে ঢোকে জসিম। তখন গৃহবধরূ চিৎকারে কয়েকজন প্িরতবেশী এগিয়ে আসলেও তাদের সামনেই তাকে চড়, কিল, ঘুষি, লাথি মারে জসিম। জসিমের বিরুদ্ধে মামলা করায় ওই নারীকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়। ২১ জুলাই বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের গহৃবধূ ঈষিতা আক্তার রানীকে তাঁর শশু¦র, শাশুড়ি ও ননদ জামাই আলমগীর ও দেবর আল-আমিন ও আবুল হাসান রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে এবং ইস্ত্রি গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয়। এই অমানুষিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে রাণী মারা গেলে তার মুেখ বিষ ঢেলে এলাকায় আত্মহত্যার প্রচারণা চালানো হয়। অন্যদিকে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় গত ২২ অক্টোবর রাজশাহী বিশ¦িবদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে রাকিবুল ইসলাম ওরফে লিমন। ৩ জানুয়ারি ঝালকাঠির রাজাপুের বি.এম কলেজের এক ছাত্রীকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আদনান হোসেন নামে এক যবুক। দীঘর্দিন ধরে আদনান তাকে বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এসব প¯্রÍাবে রাজী না হওয়ায় কলেজে যাওয়া-আসার পথে সে নিয়মিত ঐ ছাত্রীকেও উত্যক্ত করতো।

ঢাকা বিশ¦িবদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই বিভাগেরই এক ছাত্রী অভিযক্তু শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ও অনষুদের ডিনের কাছে স্মারকলিপি পদ্রান করতে গেলেও তারা তা গ্রহণ করেন নি। ১০ অক্টোবর খুলনার রূপসা সেতু এলাকায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় রাজু বেপারি নামের এক যবুককে পিটিয়ে হত্যা করে বখাটেরা।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনা ৭

সালিশ ও ফতোয়া

ফতোয়ার নামে বিচারবহিভর্তূ শাস্তি প্রদান অসাংবিধানিক ও অপরাধমলূক কমর্কান্ড বলে হাইকোটের্র নিদের্শনা থাকা সত্ত্বেও বিগত বছরের মতো ২০১৩ সালেও ফতোয়া ও সালিশের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েছেন অনেক নারী। ২০১৩ সালে সালিশ ও ফতোয়ার মাধেমে ২১ জন নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে থানায় মাত্র ৫টি মামলা হয়। সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন ৭ জন, গ্রামছাড়া বা সমাজচ্যুত হয়েছেন ৩ জন এবং নির্যাতিত হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। এছাড়া ২০১৩ সালে ৬টি হিল্লা বিয়ের

ঘটনা ঘটে।

এসিড নিক্ষেপ, পারিবারিক নির্যাতন এবং গৃহকর্মী নির্যাতন

বিগত বছরের মতো ২০১৩ সালেও নারী ওপর এসিড নিক্ষেপ, যৌতকু, পারিবারিক নির্যাতন এবং গহৃপরিচারিকা নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত ছিল। এ বছরে এসিড নিক্ষেপের শিকার হন ৪৪ জন নারী, যার মাত্র ১৬টি ঘটনায় থানায় মামলা হয়। অপরদিকে যৌতুকসহ পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন ৭০৩ জন নারী; যার মধ্যে ৩৬১টি ঘটনায় মামলা হয়। এ ছাড়া ৭৮ জন গহৃকর্মী (নারী) নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে মাত্র ২৪টি ঘটনায় মামলা হয়।

সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন

এ বছরে ভারতের সীমান্ত পহ্ররী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন অনেক নিরীহ নাগরিক। পত্র-পত্রিকায় পক্রাশিত খবর অনুযায়ী ২০১৩ সালে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনসহ মোট ৩৩৫টি ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৬ জন, শারীরিক নির্যাতনে আহত হয়েছেন ৮৪ জন এবং সীমান্ত থেকে অপহরণের শিকার হয়েছেন ১৭৫ জন। সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে গভীর উদ্বেগ পক্রাশ করা হলেও এ ধরনের ঘটনা নিরসনের জন্য গহৃীত সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থা পরি¯ি’িতর উন্নতি ঘটাতে পারেনি। ১১ জলুাই ম¤ুা^ই থেকে দেশে ফেরার পথে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার আঙরাইল সীমান্ত চৌকির কাছে ছয় বছরের শিশুপুত্রের সামনেই এক বিএসএফ সদস্য কতর্কৃ ধষর্ণের শিকার হন বাংলাদেশী এক নারী। ৯ জানয়ুারি মিয়ানমার সীমান্তে নাসাকা বাহিনীর গুলিতে নাফ নদীতে নিহত হন টেকনাফ উপজেলার গুদামপাড়া এলাকার জেলে ফারুক। অন্যদিকে ভারতীয় বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ২০১১ সালের বহলু আলোচিত ফেলানী হত্যার বিচারের রায় ঘোষণা করা হয় এ বছরের ৫ সেপ্টে¤র^। রায়ে অভিযক্তু বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করায় দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে পহ্রসনের এই বিচার নিয়ে। যদিও রায় পনুর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

মত প্রকাশ ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার

মত পক্রাশের অধিকার সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে ¯ী^কতৃ হলেও এ বছরের বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদলগুলোর সভা-সমাবেশে বাধা দান এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবনুালের বিচারকের স্কাইপ কথোপকথন পক্রাশের অভিযোগে গত ১১ এপ্রিল ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়। ৫ মে মতিঝিলে হেফাজত ইসলামের সমাবেশের সরাসরি স¤পচ্রারের সময় দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি নামে দুিট বেসরকারী টেলিভিশনের স¤পচ্রার পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরদিকে তথ্য অধিকার আইন পাসের পর প্রায় ৪ বছর পার হলেও তথ্য অধিকার আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারী বিভিন্ন প্িরতষ্ঠানের তথ্য কর্মকর্তাদের তথ্য পদ্রানে নেতিবাচক মনোভাব বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া টিভি টক শোর ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিধি-নিষেধ, অযৌক্তিক উক্তি, বিরোধীদলের সমাবেশের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া এবং ইন্টারনেট, ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা মত পক্রাশের ¯া^ধীনতাকে খর্ব করেছে।

শ্রমিকের অধিকার

২০১৩ সালের সবচেয়ে বিপযর্কর ঘটনা হচ্ছে ২৪ এপিল্র সাভারের রানা প্লাজা ধসে ৬ টি গার্মেন্টস কারখানার ১১৩৪ জন শ্িরমক নিহত ও প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের আহত হওয়া। নিহত ও আহত শ্িরমকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সবসময় উপেক্ষিত হলেও রানা প্লাজার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট স্বপ্েরণাদিত একটি রুল জারি করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের ও ভবনের মালিক রানাকে গ্রেফতার করা হলেও এখন পযর্šÍ চার্জশিট পদ্রান করা হয়নি। এছাড়া ৮ অক্টোবর পলমল গ্রুপের আসওয়াদ কম্পোজিট কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আরও ৭ জন শ্িরমক মতৃ ্যুবরণ

করে। ২০১২ সালে তাজরীন গামেন্টর্সে অগিকœান্ডে ১১২ জন শ্িরমক মত্যৃুর ঘটনায় দায়েরকতৃ মামলার অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়।

গামের্›টস শিল্পে গত বছরের মতো এ বছর জুড়েও ন্যূনতম মজুির বৃিদ্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই, বকেয়া বেতন ইত্যাদি দাবিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শ্িরমক অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ আন্দোলন অব্যাহত ছিল। উপরন্তু ন্যূনতম মজুির বৃিদ্ধর দাবিতে সষ্টৃ অসন্তোষের ফলে বিক্ষোভের সময় শ্িরমক-পুিলশ সংঘর্ষে ১৮ নভে¤র^ ২ জন শ্রমিক নিহত হন। কারখানার কর্মপরিবেশ, কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্িরতষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতার বিষয়টি এখনও কাযর্কর হয়নি।

অভিবাসী শ্রমিক

এ বছরে অভিবাসী শ্িরমকদের সংকট নিরসনে সরকার কতর্কৃ সংসদে ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী বিল ২০১৩’ পাস করার ফলে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক স¤া¢বনা তৈরী হয়েছে। তথাপি বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এক শ্রেনীর অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের দালালচক্রের

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৩ : আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনা ৮

মাধ্যমে প্িরতনিয়ত পত্রারণার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ বছরে মালেশিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে মাত্র একদিনে ৩৮৭ জন বাংলাদেশী অভিবাসী শ্িরমককে আটকের ঘটনাটি একটি উদ্বেগজনক ঘটনা। এছাড়া সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বিদেশে জেল খাটাসহ অভিবাসী শ্িরমকদের নানা হয়রানী নির্যাতনের ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাসস্থানের অধিকার

বাস¯া’নের অধিকার সংবিধানের অন্যতম মৌলিক অধিকার বলে ¯ী^কতৃ হলেও ২০১৩ সালে কোনোরকম নোটিশ ও পনুর্বাসন ছাড়াই অনেক বস্তি ও বাস¯া’ন উচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। ১৭ অক্টোবর হাজারীবাগ বালুর মাঠ বস্তিতে অগ্নিকা-ের ঘটনায় বস্তিতে অব¯িত’ প্রায় ৪৭৫টি ঘর পুেরাপুির ভস্মিভতূ হয়। বস্তিবাসীদের অভিযোগ, ¯া’নীয় পভ্রাবশালীরা সরকারি জমিতে ঘর তৈরি করে নিমঅœায়ের মানুষের কাছে ভাড়া দিলেও তারাই আবার বস্তি উচ্ছেদের জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৭ আগষ্ট রংপরু নগরীর রাজেন্দ্রপরু শালমারা এলাকায় রংপরু জেলা পশ্রাসন দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারী ১৫টি ভূমিহীন পরিবারকে পনুর্বাসনের কোনো ব্যব¯া’ না করে উচ্ছেদ করে। উচ্ছেদের আগে তাদেরকে কোন নোটিশ না দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুিলশ ফোর্স দিয়ে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়।

আদিবাসীদের অধিকার

ক্ষমতাসীন সরকারের নির্বাচনী প্িরতশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও আদিবাসীদের সাংবিধানিক ¯ী^কৃিত এখনও মেলে নি। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুিক্তর বাস্তবায়ন প্িরক্রয়াও কাযর্ত থেমে আছে এবং পার্বত্য ভূিম কমিশনের কার্যক্রমও গতিশীল হচ্ছে না। সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প”্রছন্ন সহযোগিতায় পার্বত্য অঞ্চলে অব¯া’নরত বাঙ্গালীদের দ্বারা আদিবাসীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচরু, অগিস্নংযোগ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বাধা পদ্রান, নারী ও শিশুদের ওপর যৌন হয়রানি, ভূমি দখল ও উচ্ছেদসহ নির্যাতনের অনেক অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের বড় একটি ঘটনা হচ্ছে- ৩ আগস্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দংয়ে আদিবাসী পাহাড়ীদের প্রায় শতাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লটুপাট ও ভাংচুেরর ঘটনা। এ ঘটনায় আদিবাসী ১৬২টি পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে গভীর জঙ্গলে ও ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশয়্র নেয়। পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্তররা তাদের নিজ^ গ্রামে ফিরে আসেন।

দেশের মানবাধিকার পরি¯ি’িত উনয়œনে আমরা সরকারের আরো কাযর্কর ভূিমকা পত্র্যাশা করি। নির্বাচিত গণতাšিক¿ সরকারের কাছে জনগণের যে পত্র্যাশা থাকে সে অনযুায়ী সরকারের উচিত মানবাধিকারের একটি সর্বজনগ্রাহ্য মান বজায় রাখা। কিন্তু আমরা প্রায়শ লক্ষ্য করি, ক্ষমতাসীনরা বিগত সরকারের সমালোচনা করে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে এবং অন্যদিকে বিরোধীদলও কাযর্কর কোনো ভূমিকা পালন না করে শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে। আমরা আশা করি এই প্রবণতা কাটিয়ে উঠে সরকার ও বিরোধীদল উভয় পক্ষই মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূিমকা পালন করবে।