চলতি অর্থবছরে সরকার রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে
ঢাকা,২৩ নভেম্বর, প্রেস বিজ্ঞপ্তি: স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ’উন্নয়ন অন্বেষণ’এর নভেম্বর মাসের অর্থনৈতিক পর্যালোচনা মতে, চলতি অর্থবছরে সরকার রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্তরায় সৃষ্টি করবে।
রাজস্ব আদায়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্কলন অনুসারে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮১৮ কোটি টাকা কম অর্জিত হবে। বর্তমান বাজেট অনুসারে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ১৬৭৪৫৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে বাজেট ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৫৮৫০ কোটি টাকা বেশি দাঁড়াবে। চলতি বাজেটে প্রাক্কলিত ২২২৪৯১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
বর্তমান অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আদায়কৃত আমাদানি সম্পূরক আবগারি শুল্ক গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ৫.৬৬ ও ২৪.০৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমদানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর আদায়ের ক্ষেত্রেও গত অর্থবছরের তুলনায় ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। উক্তখাতে এই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৪.৫২ ও ১৬.৬৩ শতাংশ প্রবৃ্িদ্ধ অর্জিত হয়েছে, যা বিগত বছরের একই সময়ে ৭.৬৯ ও ১৯.১৩ শতাংশ ছিল।
স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে করজালের সংকীর্ণতার কারণে রাজস্ব আদায় প্রচেষ্টা ব্যহত হচ্ছে। দেশের মোট জনসংখ্যার কেবলমাত্র ১.৪ শতাংশ প্রত্যক্ষ আয়করের আওতাধীন এবং ১ শতাংশেরও কম করদাতা প্রকৃতপক্ষে নিয়মিত কর প্রদান করেন।
২০০২-২০০৩ ও ২০১০ সালের মধ্যে আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান ২৬.০৯ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৪.৭৬ শতাংশ। উন্নয়ন অন্বেষণের মতে অর্থনীতির এ ধরণের কাঠামোগত বাধা আয়কর বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সংস্থাটির ভাষ্য অনুসারে, রাজস্ব আদায় কম হলে সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো খাতেও সরকারের কম বিনিয়োগ হবে। দৃশ্যত, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মানব সম্পদ উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ব্যয়ের ২০.২২ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৯.৬ শতাংশ। মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যথাক্রমে ২৩ ও ২৫.৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ২৩.৫ ও ৩০.৯ শতাংশ ছিল। একইভাবে, অবকাঠামোগত খাতে আগের বছরের তুলনায় ২.৬ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে বরাদ্দ কমেছে। শিক্ষা ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার উন্নয়ন খাতে ২০১২-১৩ অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ শতকরা ০.১২ ও ০.৬১ ভাগ কমেছে।
উম্মুক্ত বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করার ফলে আমদানি রপ্তানি খাত থেকে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ কর আদায়ের প্রবৃদ্ধি থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম। ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ সালের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি খাত থেকে কর আদায় ২.৯৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ কর আদায়ের হার একই সময়ে ১৩.৫৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রত্যক্ষ করের উপর গুরুত্ব আরোপ করা সত্ত্বেও সরকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের অনুপাতে কোন তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন অর্জন করতে পারে নি। মোট করের বেশিরভাগ অংশ পরোক্ষ কর থেকে আসে। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে পরোক্ষ করের গড় পরিমান ৭৩ শতাংশের কাছাকাছি রয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীকে অধিক হারে মূল্য সংযোজন করের মত আয় নিরপেক্ষ কর প্রদানের জন্য করের বেশির ভাগ বোঝা তাঁদেরকে বহন করতে হয়।