অভীষ্ঠ গন্তব্যে না পৌছানো পর্যন্ত সর্বাত্নক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে :তারেক রহমান
ঢাকা, জানুয়ারি ৬, (এনএসনিউজওয়্যার) –বাংলাদশের ভয়ানক এ দুর্যোগকালীন সময়ে বর্তমানে যেন ন্যায়ের সাথে অন্যায়ের, সত্যের সাথে মিথ্যার, এবং জনগনের আকাঙ্খার সাথে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতার মোহের লড়াই চলছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনকে প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করায় গণতন্ত্রকামী সমগ্র দেশবাসী ও ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের তৃনমূল সহ সকল স্তরের নেতাকর্মীদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। সাধারণ জনগণ ঘরে-বাইরে সর্বত্র তাদের অধিকার হরণের এ নির্বাচনের বিরুদ্ধে যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন – তা একাধারে রাজপথে থাকা আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের জন্য যেমন অনুপ্রেরনাদায়ক – তেমন এ দেশের গণতন্ত্রকে সমুন্নত রেখে মুক্ত আদর্শ ও চিন্তা প্রকাশের সহায়ক। ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আমাদের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সাফল্য ইনশাল্লাহ অনিবার্য।
তামাশার নির্বাচনকে কার্যত রুখে দেওয়ার মাধ্যমে দেশবাসী একটি লক্ষ্য অর্জন করলো মাত্র। এটি চূড়ান্ত সাফল্য নয়। বরং চলমান স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়ারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের সবার মূল লক্ষ্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে গণতন্ত্রকামী মানুষের চেতনার প্রতিফলন ঘটানো। সেই অভীষ্ঠ গন্তব্যে না পৌছানো পর্যন্ত সর্বাত্নক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমাদের মাঝে অনেকেই দিনের পর দিন ধরে সংগ্রাম করছেন রাজপথে। আর তাদের সাথে রয়েছে সকল শ্রেণী ও পেশার আরও কোটি-কোটি মানুষ সমর্থন, প্রেরণা, উচ্ছ্বাস ও দোয়া। আমি বিশেষভাবে বলতে চাই, সরকারের বাকস্বাধীনতা হরণের সকল অপচেষ্টার মাঝেও অনেক গণমাধ্যম যেভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে দায়বদ্ধতা অব্যাহত রাখছে, তাতে মুক্তিকামী বাংলাদেশিরা আজ অনুপ্রানিত।
আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের এ আন্দোলনে ইতিমধ্যে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ৫ জানুয়ারির প্রত্যাখ্যাত নির্বাচনের দিন সরকারের নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি সাহসী সেনানী, আহত হয়েছেন অসংখ্য। নির্মম নির্যাতন ও জেল-জুলুমের স্বীকার হচ্ছেন অগুনিত মানুষ। সমগ্র বাংলাদেশ যেন আজ এক রক্তের উপত্যকা। যার অলিতে-গলিতে বাজছে বিপ্লবের সুর আর চলছে বিপ্লবীর কীর্তি। রাষ্ট্রযন্ত্রের দমন-নিপীড়নে যে মহান আত্নত্যাগ, আমি আবারো তা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। ১৬ কোটি মানুষের বড় একটি অর্জনের জন্য – তথা সরকারের চাপিয়ে দেয়া পরাধীনতা, এবং জনগনের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য – পরিবার-পরিজন-সহযোদ্ধা হারানোর গভীর কষ্ট বুকে চেপেই আমাদের আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও তাদের পরিবার সমূহের সেই আত্নত্যাগ সংগ্রামরত বাংলাদেশিরা ইনশাল্লাহ কোনদিনই ভুলবে না। আত্মত্যাগের এই স্মৃতিই হবে আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত আন্দোলনের সংগ্রামী প্রেরণা। সেই আত্ন্যত্যাগকে অর্থবহ করে তুলতে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যেকোনো মূল্যে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছাতে হবে।
প্রবাসে চলমান চিকিৎসার কারণে বর্তমানে আমি অতীতের মত রাজপথের আন্দোলনে শরিক হতে পারছি না। কিন্তু আমার চিন্তা-চেতনা, ভাবনা-পরিকল্পনার সবকিছুর আবর্তন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ, ও চলমান আন্দোলনকে ঘিরেই।। আপনাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আন্দোলনের সাফল্য আমার জীবনীশক্তি। একই ভাবে আপনাদের উপর নেমে আসা আঘাত আমাকে শোকাহত করে তুলে। বিএনপির তৃণমূল সহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর প্রতি আমার প্রত্যাশা – আমার শারীরিক অনুপস্থিতি যেন বাংলাদেশি জাতীয়তবাদের আজকের এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে গড়া আপনাদের তীব্র আন্দোলনে যেন আজ প্রতিফলিত হয় যে – আপনারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রতীক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সৈনিক। আপনারা মনে রাখবেন, এই গণআন্দোলনে দেশ
ও দেশের বাইরে থাকা প্রত্যেকটি বাংলাদেশির সমর্থন রয়েছে। বিশ্বের সকল রাষ্ট্র ও গণমাধ্যম একচ্ছত্র ভাবে আমাদের এই মুক্তির সংগ্রামের পক্ষাবলম্বন করছে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আমার নির্দেশনা থাকবে: আপনারা নিজ-নিজ এলাকায় শত প্রতিকুলতার মাঝে হলেও সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক
আন্দোলনকে যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখুন। সবাই এক হয়ে, আলোচনার মাধ্যমে, সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করে, নিজ-নিজ এলাকার জনগণকে একাত্ম করে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আমাদের প্রতিটি অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সকল সদস্য যদি আন্দোলনে আন্তরিকভাবে শরিক হন – ইনশাল্লাহ পৃথিবীর কোনো শক্তির পক্ষে আমাদেরকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
এত বিশাল, নিবেদিতপ্রাণ, জনসমর্থিত একটি দলকে কেউ অভীষ্ঠ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। অবশ্যম্ভাবী বিজয় হয়ে উঠবে সময়ের ব্যাপার মাত্র। মনে রাখবেন, আমাদের এই আন্দোলন শুধু আমাদের একার নয়। দেশের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ আজ চাইছে যেন আমরা সফল হই, এই স্বৈরাচারীদের উৎখাত করি। এক চুল পরিমান ছাড় না দিয়ে – জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে – গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইকে আপনারা পরবর্তী ধাপে উন্নীত করে দেশকে শীঘ্রই স্বৈরাচার ও অপশাসন মুক্ত করবেন ইনশাল্লাহ।
প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ – যারা ৫ জানুয়ারির কলঙ্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন, নিজ চোখে সরকারের কারচুপি ও অরাজকতা দেখেছেন – তাদেরকে আমি অনুরোধ করব, বিবেকের কাছে সততা নিয়ে প্রশ্ন করুন: আপনারা কাদের পক্ষ হয়ে, কাদের বিপক্ষে কাজ করছেন? আপনাদের দায়বদ্ধতা কি জনবিচ্ছিন্ন, সমর্থনহীন সরকারের প্রতি; নাকি নিষ্পেষিত গণমানুষের প্রতি? দেশের অর্ধেকেরও কম আসনে অনুষ্ঠিত ন্যাক্কারজনক নির্বাচনে যখন শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোট পড়ে – অর্থাত সমগ্র দেশের শতকরা ২ ভাগেরও কম মানুষ যখন ৫ বছরে একবারের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন – সেই ভোটারদের আবার প্রায় সবাই যখন হয় অবৈধ সরকারের জাল ভোটার, দলীয় কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীর সদস্য – তখন দেশের জন্য নেওয়া শপথের সম্মানে হলেও আপনাদের উচিত নিজেদের কর্তব্য ও কর্মকান্ডকে নিয়ে নতুন করে ভাবার।
শুধুমাত্র সরকারী দায়িত্ম পালনের অজুহাতে দেশবিরোধী শক্তির হুকুম তামিলের সুযোগ নেই। কারণ আজ সরকার পক্ষ বলে কিছু নেই। পক্ষ শুধু গণবিরোধী স্বৈরাচারী বনাম দেশের মানুষ। ভেবে দেখুন আপনারা কোন পক্ষে থাকবেন। স্বৈরাচারীদের সূর্য অস্তগামী দেখেও যদি মানুষের পক্ষে থাকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে আপনারা কিন্তু ইতিহাসের পাতায় দায় এড়াতে পারবেন না।
আমার উদাত্ত আহ্বান, দেশবাসীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনে এগিয়ে চলা এই আন্দোলনে যার-যার অবস্থান থেকে সবাই সর্বাত্নক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিকে, প্রতিটি বাড়িকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করুন। একাত্তরে আমরা এভাবেই দেশকে হানাদারমুক্ত করেছিলাম। সেই সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতা অর্জনের। আর আজকের এই সংগ্রাম সার্বভৌমত্ব রক্ষার। সেই সংগ্রাম ছিল দেশকে হানাদার-মুক্ত করার। আর আজকের এই সংগ্রাম দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার।
এই দেশটা আমাদের সবার। একে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের সবার সর্বাত্নক ভুমিকা রাখতে হবে। তা আমরা সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকি, আর নাই থাকি। গণতন্ত্র রক্ষার্থে, গণমানুষ দ্বারা পরিচালিত, আমাদের গণমুখী গণআন্দোলনে, শরিক প্রত্যেককে, আবারো ধন্যবাদ। বিজয় আমাদের হবেই, ইনশাল্লাহ।